ময়মনসিংহ থেকে ঢাকা ট্রেনের সময়সূচী, ভাড়া এবং স্টপেজ স্টেশন
ময়মনসিংহ থেকে ঢাকা রেলপথ বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ মাধ্যম। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ব্যবসা, শিক্ষা, চিকিৎসা ও অন্যান্য কারণে ময়মনসিংহ থেকে ঢাকায় যাতায়াত করেন। রেলপথে ভ্রমণ সাশ্রয়ী, আরামদায়ক এবং দ্রুত হওয়ার কারণে এটি ময়মনসিংহের যাত্রীদের জন্য জনপ্রিয় একটি মাধ্যম। বাংলাদেশ রেলওয়ে ময়মনসিংহ থেকে ঢাকার জন্য একাধিক আন্তঃনগর এবং লোকাল ট্রেন পরিচালনা করছে। এই ব্লগে আমরা ময়মনসিংহ থেকে ঢাকার ট্রেনের সময়সূচী, ভাড়া, স্টপেজ স্টেশন এবং অন্যান্য তথ্য নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
ময়মনসিংহ থেকে ঢাকার ট্রেনের ভাড়া
বাংলাদেশ রেলওয়ে বিভিন্ন ধরণের ট্রেন ও আসনের জন্য আলাদা আলাদা ভাড়া নির্ধারণ করেছে। ময়মনসিংহ থেকে ঢাকার রুটে এসি, নন-এসি, শোভন চেয়ারসহ বিভিন্ন ধরনের আসন রয়েছে। নিচে ময়মনসিংহ থেকে ঢাকার ট্রেনের বিভিন্ন শ্রেণির ভাড়ার তালিকা দেওয়া হলো:
১. শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) চেয়ার:
- ভাড়া: ২৭০-৩০০ টাকা
- এসি চেয়ার আপনাকে শীতল এবং আরামদায়ক ভ্রমণের সুযোগ করে দেয়। দীর্ঘ সময় ভ্রমণে যারা স্বাচ্ছন্দ্য চান, তাদের জন্য এটি উপযুক্ত।
২. শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) কেবিন:
- ভাড়া: ৫০০-৬০০ টাকা
- এসি কেবিন হলো ব্যক্তিগত এবং আরামদায়ক কেবিন, যেখানে আপনাকে পুরো যাত্রার সময় সুনিশ্চিত আরাম দেওয়া হয়। যাত্রাপথে গোপনীয়তা এবং অতিরিক্ত আরাম চাওয়া যাত্রীরা এই শ্রেণি বেছে নিতে পারেন।
৩. শোভন চেয়ার (নন-এসি):
- ভাড়া: ১৩০-১৫০ টাকা
- শোভন চেয়ার আরামদায়ক এবং সাশ্রয়ী নন-এসি আসন। এটি সাধারণ যাত্রীদের জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় শ্রেণি, যেখানে বেশিরভাগ যাত্রী যাতায়াত করেন।
৪. লোকাল ট্রেনের ভাড়া:
- ভাড়া: ৭০-১০০ টাকা
- লোকাল ট্রেনে সাধারণত স্বল্প খরচে যাত্রা করা যায়, তবে এতে যাত্রার সময় কিছুটা বেশি লাগে এবং আরামের দিক থেকে এটি তুলনামূলকভাবে সাধারণ।
ময়মনসিংহ থেকে ঢাকার ট্রেনের সময়সূচী
ময়মনসিংহ থেকে ঢাকার জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ে নিয়মিতভাবে আন্তঃনগর, মেইল ও লোকাল ট্রেন পরিচালনা করছে। বিভিন্ন ট্রেন দিনের বিভিন্ন সময়ে ছাড়ে, যা যাত্রীদের বিভিন্ন সময়ে ঢাকায় পৌঁছাতে সাহায্য করে। ময়মনসিংহ থেকে ঢাকার ট্রেনের সময়সূচী নিচে উল্লেখ করা হলো:
১. তিস্তা এক্সপ্রেস (৭০৭/৭০৮):
- ময়মনসিংহ থেকে ছাড়ার সময়: সকাল ৫:২০
- ঢাকায় পৌঁছানোর সময়: সকাল ৮:১০
- স্টপেজ স্টেশন: ময়মনসিংহ, গফরগাঁও, টঙ্গী, জয়দেবপুর, বিমানবন্দর, ঢাকা
২. ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস (৭৪৩/৭৪৪):
- ময়মনসিংহ থেকে ছাড়ার সময়: বিকাল ৩:৩০
- ঢাকায় পৌঁছানোর সময়: সন্ধ্যা ৬:৩০
- স্টপেজ স্টেশন: ময়মনসিংহ, গফরগাঁও, টঙ্গী, জয়দেবপুর, বিমানবন্দর, ঢাকা
৩. জামালপুর এক্সপ্রেস (৭৯৭/৭৯৮):
- ময়মনসিংহ থেকে ছাড়ার সময়: সকাল ৭:১৫
- ঢাকায় পৌঁছানোর সময়: সকাল ১০:১৫
- স্টপেজ স্টেশন: ময়মনসিংহ, গফরগাঁও, টঙ্গী, জয়দেবপুর, বিমানবন্দর, ঢাকা
৪. ইকরাম এক্সপ্রেস (৭৮১/৭৮২):
- ময়মনসিংহ থেকে ছাড়ার সময়: বিকাল ৪:০০
- ঢাকায় পৌঁছানোর সময়: সন্ধ্যা ৭:০০
- স্টপেজ স্টেশন: ময়মনসিংহ, গফরগাঁও, টঙ্গী, জয়দেবপুর, বিমানবন্দর, ঢাকা
৫. মহুয়া এক্সপ্রেস (৭৮৫/৭৮৬):
- ময়মনসিংহ থেকে ছাড়ার সময়: সকাল ৮:১৫
- ঢাকায় পৌঁছানোর সময়: দুপুর ১১:১৫
- স্টপেজ স্টেশন: ময়মনসিংহ, গফরগাঁও, টঙ্গী, জয়দেবপুর, বিমানবন্দর, ঢাকা
ময়মনসিংহ থেকে ঢাকার রুটের স্টপেজ স্টেশনসমূহ
ময়মনসিংহ থেকে ঢাকার পথে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন রয়েছে, যেগুলোতে ট্রেন থামে। এসব স্টেশনে ট্রেন কিছু সময়ের জন্য বিরতি দিয়ে যাত্রী উঠানামার সুযোগ দেয়। নিচে ময়মনসিংহ থেকে ঢাকার বিভিন্ন স্টপেজ স্টেশন এবং তাদের গুরুত্ব উল্লেখ করা হলো:
১. ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশন:
ময়মনসিংহ বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর এবং এই অঞ্চলের প্রধান রেলওয়ে স্টেশন। এখান থেকে প্রতিদিন অসংখ্য যাত্রী ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য শহরে যাতায়াত করেন।
২. গফরগাঁও স্টেশন:
ময়মনসিংহ থেকে ঢাকার পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন হলো গফরগাঁও। এটি ময়মনসিংহের নিকটবর্তী হওয়ার কারণে এখানে ট্রেন প্রায় সব সময় থামে।
৩. জয়দেবপুর স্টেশন:
ঢাকা জেলার গাজীপুর অঞ্চলে অবস্থিত জয়দেবপুর স্টেশনও একটি গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন। ময়মনসিংহ থেকে ঢাকার পথে এটি প্রায় সব ট্রেনেরই স্টপেজ পায়।
৪. টঙ্গী স্টেশন:
গাজীপুরের টঙ্গী অঞ্চলে অবস্থিত এই স্টেশনটি ঢাকার নিকটবর্তী একটি স্টেশন। অনেক যাত্রী এই স্টেশন থেকে উঠানামা করে থাকেন।
৫. বিমানবন্দর স্টেশন:
ঢাকার উত্তরা এলাকায় অবস্থিত বিমানবন্দর স্টেশনটি বিশেষত যারা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাতায়াত করেন তাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
৬. ঢাকা (কমলাপুর) রেলওয়ে স্টেশন:
এই রুটের চূড়ান্ত গন্তব্য হলো ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন। এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রেলওয়ে স্টেশন এবং রাজধানীর প্রধান কেন্দ্র।
ট্রেনে ভ্রমণের সময়কাল
ময়মনসিংহ থেকে ঢাকার রেল ভ্রমণের সময়কাল সাধারণত ২.৫ থেকে ৩ ঘণ্টার মধ্যে হয়ে থাকে। তবে এটি ট্রেনের ধরন ও স্টপেজ স্টেশনের উপর নির্ভর করে। আন্তঃনগর ট্রেনগুলো তুলনামূলক দ্রুত সময়ে পৌঁছে, যেখানে মেইল ও লোকাল ট্রেনগুলোতে কিছুটা বেশি সময় লাগে।
ট্রেনে ভ্রমণের সুবিধা
ট্রেনে ভ্রমণ অন্যান্য পরিবহন মাধ্যমের তুলনায় অনেক আরামদায়ক, সাশ্রয়ী এবং নিরাপদ। নিচে ট্রেন ভ্রমণের কিছু সুবিধা উল্লেখ করা হলো:
১. আরামদায়ক ভ্রমণ:
ট্রেনের ভ্রমণ বেশ আরামদায়ক, কারণ ট্রেনের ভেতর চলাফেরার সুযোগ রয়েছে এবং আপনি চাইলে আরাম করে বসে ভ্রমণ উপভোগ করতে পারেন।
2. সাশ্রয়ী ভাড়া:
ট্রেনের ভাড়া সাধারণত অন্যান্য যাতায়াত মাধ্যমের তুলনায় অনেক কম। বিশেষ করে নন-এসি আসনগুলোতে খুবই কম খরচে যাতায়াত করা যায়।
৩. নিরাপত্তা ও নির্ভরযোগ্যতা:
বাংলাদেশ রেলওয়ে যাত্রীদের জন্য নিরাপদ ভ্রমণের ব্যবস্থা করে। রেলপথে দুর্ঘটনার ঝুঁকি কম এবং ট্রেনগুলি নির্ধারিত সময়ে চলাচল করে, যা অন্যান্য পরিবহন মাধ্যমের তুলনায় বেশ নির্ভরযোগ্য।